অকাজের দুপুর —- ৪০

 

দীর্ঘ দাবদাহের পর যখন আকাশ জুড়ে মেঘ করল তখন একটা ভারী আলসেমি পেয়ে বসল আমাকে! টুক করে এক কাপ চায়ে আমি তোমাকে চাই ভেবে বানিয়েও নিয়ে এলাম চা ! বিকেলের এই কনে দেখা আলোটা ধীরে ধীরে নিভু নিভু! হবে নাই বা কেন! বাইরে যে ঘোর কৃষ্ণবর্ণ মেঘ! প্রথমে নখরাবাজ মেয়ের মত একফোঁটা দুফোঁটা তারপর আর পায় কে! একেবারে সদ্যজাত গোরুর বাছুর হয়ে উঠোন জুড়ে দাপাদাপি! এতদিনে আমার চেনা বৃষ্টি এল ! তোলপাড় উঠোন! শুকনো জামাকাপড় ভিজে একসা! একটা ভেজা কাক ডানায় মুখ ডুবিয়ে ডুবিয়ে জল ছেটাচ্ছে! ঘরে ফেরার তাড়া নেই ওর। আমাদের পাড়ার নেড়িটা রোগা টিকটিকে ল্যাজ নেড়ে গা ঝাড়া দিচ্ছে! বড্ড ইচ্ছে হচ্ছিল ছুটে যাই উঠোনে! আকাশের দিকে হাঁ মুখ করে চাতকের বৃষ্টি পান করি। কিন্তু ভারী লজ্জা হোলো! ফ্ল্যাট বাড়ির জানালাগুলো দিয়ে কার গোপন চোখে ধরা পড়ে যাব আবার! না বাবা! থাক! ওসবে কাজ নেই! বরং জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে দু এক ফোঁটা ধরা যাক! এমন কথা ভাবতে ভাবতে আনমনা হয়ে বাড়িয়েও দিলাম হাত! ও বাবা! পাশের বাড়ির খ্যাটখ্যাটে মহিলা যেন ভূত দেখল! নিষিদ্ধ কর্মকান্ডে লিপ্ত মধ্যবয়সী মহিলার এমন মাথার গন্ডগোল দেখে উনি আর স্থির থাকতে পারলেন না! খুবই বিরক্ত আমার এই বেহায়াপনায়! যেন পরপুরুষের কোমর জড়িয়ে ধরেছি! অশ্লীল আর শ্লীলের মাঝখানের তফাতটুকু বুঝতে বুঝতে প্রায় বুড়ো হয়ে গেলাম! মাঝে মাঝে মনে হয় এ বুঝি দই পাতার চেয়েও কঠিন বিষয়! ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে দুধের উষ্ণতা মাপো রে! একটু গরম হলে দই যাবে টকে আর একটু ঠান্ডা হলে দইই পড়বেনা! কি মুশকিল কাজ বলুন তো! অথচ মায়াদি কি অবলীলায় রোজ রোজ ঠিকঠাক দই পাতে! জীবনে বড় আফসোস রয়ে গেল! এখনো মায়াদি হতে পারলাম না!

বুনোফুলের গন্ধ —- ১

কেঠো জীবনের মাড়াই কলে পিষতে পিষতে যখন হাঁফিয়ে উঠি তখনই মাথার ভেতর পোকাটা শুঁড় নাড়ায় ! মনটা হু হু করে ছোটে তেপান্তরের মাঠের পানে ! দিগন্ত বিস্তৃত ধানক্ষেত মাথা দুলিয়ে ডাকে ! ছোট ছোট নীল পাহাড় ভাসে চোখে ! লাল মেঠো পথ ধরে একপাল ছাগলের সঙ্গে ছুটে চলে মন ! ব্যস অমনি ‘রইল ঝোলা চলল ভোলা’ বলে বেরিয়ে পড়ি ! সামনে খ্রীষ্টমাসের এমন নধর ছুটি কোনমতেই হাতছাড়া করা যাবেনা ! কাজেই ঘর বুকিং করে বেশ কয়েকজন মিলে বেরিয়ে পড়লাম ! গন্তব্য মনোহরপুর ! থাকার জায়গা বলতে “সান্তুর ( santoor ) গেষ্ট হাউস”!
দিনটা ছিল ২৪শে ডিসেম্বর ! টিকিট আগেই কাটা হয়ে গিয়েছিল ! কোরাপুট -হাওড়া এক্সপ্রেস ! এই ট্রেনটির আরো একটি নাম আছে ! জগদলপুর –হাওড়া এক্সপ্রেস ! ছাড়ার সময় রাত ৯.৩০ ! ক্রীষ্টমাসের প্রাক্কাল ! জ্যামজটের দূর্ভাবনায় সাতটা দশে রওনা দিয়ে সময়ের অনেকক্ষণ আগেই পৌঁছে গেলাম স্টেশনে ! জনসংখ্যা নেহাৎ কম নয় ! গেঁড়ি গুগলি ,মা শামুক ,বাবা শামুক সব মিলে জনা দশ ! মালপত্র এদিক ওদিক গুঁজে বসে গেলাম পরস্পর আড্ডায় ! রাতের খাবার সঙ্গেই ছিল ! পরোটা ,আলু চচ্চড়ি আর মিষ্টি সহযোগে রাতের খ্যাঁটন বেশ ভালই হোলো ! খেয়ে দেয়ে আরো কিছুক্ষণ আড্ডা ! এদিকে নিয়মনিষ্ঠ জনগণ প্রায় প্রত্যেকেই শুয়ে পড়েছে ! শুধু আমরা দু তিনজন নিশাচর গলা নীচু করে যতটা হো হো হি হি করা যায় করছি ! কে কবে জার্ণিতে কি কি কীর্তি করেছে তার খোরাক আদান প্রদান চলছে ! এর মধ্যে সবচেয়ে রসালো হোলো জয়াদির কীর্তি ! একবার নাকি ট্রেন ছাড়ার জন্য গার্ড পতাকা নাড়ছিল এদিকে জয়াদির বন্ধু তখনো প্ল্যাটফর্মে ঢোকা বাকী ! জয়াদি উলটে গার্ডকে ধমকে চমকে বলেছিল “ একি একি ! আপনি পতাকা নাড়ছেন কেন !!! পতাকা নাড়া বন্ধ করুন এক্ষুণি !” হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছি যখন তখন বাবুদা বেশ উদবিগ্ন মুখে জানালো ভোর ৩.৪৫ এ মনোহরপুর স্টেশন ! সকলেরই চিন্তা ঘুম না ভাঙলে কি হবে ! তা আমি বেশ বড় মাপের নিশাচর ! আশ্বস্ত করলাম কোনো চিন্তা নেই মনোহরপুর পর্যন্ত আমি জেগেই থাকব ! ঘুমোলে তো ঘুম ভাঙার প্রশ্ন ! মনোহরপুরের আগের স্টেশন চক্রধরপুর ! কাজেই সজাগ থাকতে হবে ! চক্রধরপুর আসা মাত্র ঠেলে গুঁতিয়ে তুলতে হবে লোকজনকে! বাবুদা সাবধান করে দিল “ দেখিস আবার ঝাঁঝাঁ স্টেশনের গল্প করে ফেলিস না যেন !” এরপর রাত বাড়তে বাড়তে এক এক করে উইকেট পড়তে শুরু করে দিল ! আমার চোখে ঘুমের লেশমাত্র নেই ! হিয়াদির উইকেট তখনো পড়েনি ! শুতে যাওয়ার আগে ওকে একবার টয়লেটে যেতে হবে ! আগেই বলে রাখি হিয়াদি খুব ভীতু টাইপের মানুষ ! সবেতেই উদ্বেগ করা ওর একটা প্যাশন ! কাজেই এ হেন মানুষ ট্রেনের টয়লেটে যেতে আমাকে সঙ্গী করবে সেটা খুব স্বাভাবিক ! কাজেই গেলাম ওর সাথে ! বাথরুমের ঠিক পাশের বন্দুকধারী রেলরক্ষী ! তীক্ষ চোখে আপাদমস্তক জরিপ করছে আমাকে ! ! ট্রেনে ওঠার পর থেকেই একটা বিষয় লক্ষণীয় ! এই লাইনে প্রচুর চেকিং ! প্রায় আধ ঘন্টা পর পর চার পাঁচজন বন্দুকধারী রেলপুলিশ আসছে এবং তীব্র দৃষ্টিতে সবাইকে জরিপ করে চলে যাচ্ছে ! যাইহোক আমি যে সাধারণ জনগণ … সন্ত্রাসবাদী নই সেটা বোঝানোর জন্য রেলরক্ষীটির সঙ্গে দু চার কথা শুরু করলাম ! এই যেমন ট্রেনটা মনোহরপুরে কতক্ষণ স্টপেজ দেয় ! তার আগে কোন স্টেশন ইত্যাদি ইত্যাদি ! কথা বলতে বলতে ট্রেন এসে দাঁড়ালো কোনো একটা স্টেশনে ! আমি দরজার বাইরে ইতিউতি উঁকি দিয়ে কোন স্টেশন বোঝার চেষ্টা করছি ! হঠাৎ টয়লেটের ভিতর একটা ধাতব কোন জোরালো আওয়াজের শব্দ ! কান সজাগ করে নিশ্চিত হলাম হিয়াদি মোবাইল ফোনটা হাত থেকে ফেলেছে ! তারপর সব চুপচাপ ! নিশ্চিন্ত হলাম সবচেয়ে খারাপ কিছু হয়নি ! মিনিট দুয়েক সব চুপচাপ ! পুলিশটি থেমে থাকা স্টেশনে নেমে গেছে ! হঠাৎ সজোরে টয়লেটের দরজা খুলে গেল ! আর্ত চিৎকার ভেসে এল “ তুলি ! সর্বোনাশ হয়ে গেছে !” আমি দু সেকেন্ড ভাবতে সময় নিলাম … ওহ তাহলে সবচেয়ে খারাপ কম্মটি ঘটে গেছে! তীব্র স্বরে বললাম “ প্যানের ভেতর দিয়ে মোবাইলটা গলে গেছে তো ??? ” হিয়াদি ভেবলুর মত চোখ করে বলল “ হ্যাঁ” ! মোবাইলটা পড়ে যাওয়ার দুঃখ না আমার বন্ধ টয়লেটের কাহিনী জেনে ফেলার বিস্ময় সেটা ঠিক বোঝা গেলনা ! তীরবেগে স্টেশনে নামলাম ! ট্রেন কতক্ষণ দাঁড়াবে তাও জানিনা ! কোমর ঝুঁকিয়ে মাথা নীচু করলাম ! হ্যাঁ ! ঐ তো পড়ে আছে রেল লাইনের ওপরে চকচকে ইস্পাত রঙের মোবাইল ! এখন উপায় !
হিয়াদিও ততক্ষণে নেমে এসেছে কামরা থেকে ! ছুটে এসেছে দুই রেলরক্ষী ! বোমাটা ফাটবে বলে ভেবেছিল বোধ হয় ! হিয়াদি প্রায় কাঁদকাঁদ ! গলার স্বর কাঁপছে ! আমি কোনোমতে বললাম “ দাদা মোবাইলটা পড়ে গেছে” ! একজন রেলরক্ষী ঝুঁকে জরিপ করে বলল “ এদিক থেকে তোলা যাবেনা , ট্রেনের ঐপাশ দিয়ে নামতে হবে “ ! আমি আঁতকে উঠলাম ! “ না না ! অতক্ষণ সময় দাঁড়াবে না ট্রেনটা !” রেলরক্ষী আশ্বস্ত করল ! “ মাল আনলোডিং হবে , কাজেই আরো কিছুক্ষণ দাঁড়াবে ট্রেনটা”! হিয়াদি কাতরস্বরে “ দাদা আপনার হাতের ঐ লাঠিটা দিয়ে একটু টানুন না” ! দুজনের মধ্যে একজন বন্দুকধারী মানে যে আমার সাথে ট্রেনে কথা বলছিল ! আরেকজন লাঠিধারী ! বন্দুকধারী বলল “হাতে বন্দুক না থাকলে আমি নেমে যেতাম” !
কি করি! কি করি ! দুজনেই অসহায় মুখে ভাবছি ! বারবার কাত হয়ে পড়ে থাকা মোবাইলটা দেখছি ! স্টেশনে দু একটা লোক দূরে ঘুরে বেড়াচ্ছে ! ট্রেনের ভেতরের বাকী আটজন জানেই না এদিকে কি চলছে ! আমাদের অবস্থা দেখে লাঠিধারীর দয়া হোলো ! সে হঠাৎ সরীসৃপের মত প্ল্যাটফর্ম আর ট্রেনের গ্যাপের মধ্যে দিয়ে সুরুৎ করে গলে গেল ! নিমেষে উঠিয়ে নিয়ে এল হিয়াদির সেই যখের ধন ! হিয়াদি আনন্দে কি বলবে বুঝে পাচ্ছেনা ! যেন হারানো সন্তান ফিরে পেয়েছে ! অনেকবার করে বকশিস দিতে চাইল ওদের ! কিছুতেই নিল না ওরা ! বারবারই বলছিল “এটা আমাদের ডিউটি ! এটা আমাদের ডিউটি” !
এমন কর্তব্যপরায়ণ নির্লোভ রক্ষী দেখলে সত্যিই যে আমার ভারত মহান বলতে ইচ্ছে করে ! যাইহোক মোবাইল নিয়ে হিয়াদি সোজা বেসিনে ! ভালো করে সন্তানকে চান টান করিয়ে ট্যিসু দিয়ে মুছে স্যানিটাইজার দিয়ে ঘষে কাছে টেনে নিল ! অবিশ্বাস্যভাবে মোবাইলটায় একটা আঁচড় অব্ধি লাগেনি ! ফিরে এসে আবার একপ্রস্থ হ্যা হ্যা হি হি ! হিয়াদি তখন ধাতস্থ হয়ে মোবাইলটা পড়ার পরের অনুভূতি বলতে শুরু করেছে ! আমার একটাই প্রশ্ন ছিল ! মোবাইলটা পড়ার সাথে সাথে ও বাথরুম থেকে বেরোলো না কেন ! হিয়াদির বক্তব্যে বুঝলাম ও মোটামুটি “যাক যা গেছে তা যাক” মোডে চলে গিয়েছিল ! তারপর হঠাৎ বাৎসল্য জেগে ওঠায় দরজা খুলে বেরিয়েছে! যাইহোক এক প্রস্থ এটা নিয়ে চব্য করে আবার সবাই পাশ ফিরে শুলো ! এবার আমিও লম্বা দিলাম ! কিন্তু ঘুম কোথায় ! এ পাশ ও পাশ করেই যাচ্ছি সমানে ! একটা করে স্টেশন আসে ,উঁকিঝুকি দিয়ে স্টেশনের নাম পড়ার চেষ্টা করি ! নিঝুম স্টেশন ! রেলরক্ষী লাঠি ঠুকতে ঠুকতে এগিয়ে যায় ! কিছু যাত্রী নেমে দাঁড়ায় ! টিমটিমে আলোয় ঝিমোয় প্ল্যাটফর্ম ! ট্রেন নিজের নিয়মে আবার চলতে শুরু করে !
তখন রাত দুটোর বেশি হবে । আমি গুছিয়ে পান সাজতে বসেছি ! ! কেউ একজন যাত্রী কাউকে বলল “চক্রধরপুর আসছে” ! ঘুমের মধ্যে সজাগ বাবুদা উঠে বসল ! তারপর দেখা গেল অনেকেই বেশ সজাগ ! আমাকে বেশী গুঁতোগুঁতি করতে হয়নি ! গেঁড়ি গুগলিদের টেনেটুনে উঠিয়ে ভালমত শীতবস্ত্র জড়িয়ে নিতে বলা হোলো ! এদিকে হিয়াদি তখনও শুয়ে ! চক্রধরপুরের পরেই নেক্সট স্টেশন মনোহরপুর ! গাড়ী আধ ঘন্টা চলার পরেই যেই না দাঁড়িয়েছে অমনি আমাদের মধ্যে শোরগোল শুরু ! এ কি ! এখনো তো টাইম হয়নি ! চলে এল তো স্টেশন ! ট্রেন এক মিনিটের বেশী দাঁড়াবে না ! “ তূর্ণা শিজ্ঞির জুতো পরো’ … অপু ব্যাগটা ধর … বুম্বা নাম ! নাম শিজ্ঞির ! এই সব এগোও এগোও ’ দশ জনে নামা অসম্ভব ব্যাপার ! দু ভাগে ভাগ হয়ে যাও ! পাঁচজন এদিকের দরজা দিয়ে … পাঁচজন ওদিকের দরজা দিয়ে ! এদিকে হিয়াদি তখনও শুয়ে ! ব্যস ! হয়ে গেল বেড়ানো ! হিয়াদি সবার ডাকে হড়মড় করে চোখ কচলে উঠে বসেই চেঁচামেচি ! বিস্ময়ে ক্ষোভে ফেটে পড়ে হিয়াদি ‘এ কি তোমরা এখন ডাকছ ! স্টেশন আসার পর আমাকে ডাকছ’ ! তাকে বাকীরা বোঝাতে লাগল গাড়ী বিফোর টাইমে চলে এসেছে ! এদিকে জানালা দিয়ে উঁকি মেরে স্টেশনের নাম পড়া যাচ্ছেনা ! ঘুটঘুটে অন্ধকার ! এ কি রে বাবা ! নাহয় ছোট স্টেশন তাই বলে এমন অন্ধকার ! হুড়োতাড়া করে প্রশান্তদা লাগেজ নিয়ে প্রায় দৌড়ে নামতে গিয়ে বাধা পায় ! কেউ একজন ঘুমন্ত অবস্থা থেকে বলে “ দাদা এটা মনোহরপুর নয় ! এখনো পনেরো মিনিট দেরী আছে ! মনে হয়ে কোন ট্রেন পাস করাবে তাই দাঁড় করিয়েছে” ! লোকটা বেজায় বিজ্ঞের মত কথাটা বললেও তখন ওকে দেবদূত মনে হোলো ! একটু বাদে ট্রেন আবার মৃদুমন্দ গতিতে চলতে শুরু করল ! সবাই শীত পোষাকে মুড়েটুড়ে একেবারে যুদ্ধের জন্য যেন প্রস্তুত ! মিনিট পনেরো বাদে এল স্টেশন মনোহরপুর !
ক্রমশঃ

কুসমি লো কুসমি

“ডিম নয় তবু অশ্বডিম্ব” কিশোরদার গানটা শুনতে শুনতে ভাবলাম  … নাহ্‌ অশ্বডিম্ব নয় আজ হংসডিম্ব লইয়া গপ্পো হবে !!
সালটা ছিল ১৯৭৭ ! আমি সবে পেন্সিল ছেড়ে কলমে ঝাঁপ দিয়েছি !!  সারাদিন দৌড় ঝাঁপ , লোকের বাড়ীর ফুল ফল চুরি এসব সেরে সন্ধ্যেবেলা এক বাটি মুড়ি নিয়ে সময় কাটানোর মত প্রিয় খেলাটায় বেশ ভালোমত পারদর্শী হয়ে উঠছিলাম !  মায়ের ধৈর্য্যের সীমা যখন আমাদের মুড়ি চর্বণের সময়সীমাকে অতিক্রম করত তখনই বাঁজখাই গলায় এক আওয়াজ ভেসে আসত … “ কিরে আর কতক্ষণ সময় কাটাবি ? পড়তে বসলিইইইইই !!!”  ব্যস্‌ সব জারিজুরি শেষ !!  এরপর খানিকক্ষণ বই নামানোর নাম করে এর তাক ঝেড়ে  স্ট্যাম্প সংগ্রহের খাতায় কোন দেশের স্ট্যাম্প এখনো জোগাড় হয়নি সেটাই খোঁজার প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়ালো ! আবার বাঁজখাই গলায় হাঁক ‘ কি হোলো কি ? এখনো বসিস নি ??” হুড়মুড় করে  স্ট্যাম্পের খাতা রেখে সামনে যে বই পাওয়া গেল নিয়ে বসে পড়লাম !!   বেশীরভাগ সময়ে “কিশলয়” এর দিকে হাতটা আপন খেয়ালেই চলে যেত ! এরপর চলত পাইকারী হারে তিন ভাই বোনের ঘুম !! “সারা দিনের ক্লান্তি আমার সারাদিনের তৃষা” টাইপের !!  ঘুম চোখে কি কি করতাম সে গপ্পো আরেকদিন হবে !!! ঘুম বেশ গাঢ় হলে প্রতিদিন নিয়ম করে মায়ের হাতের একটি স্কেলের বাড়ি অথবা মাথায় এক মগ জল ঢেলে দেওয়া এই ছিল ঔষধি ! যাই হোক সেই সব কড়া ডোজের ওষুধ খেয়ে দেয়ে আমাদের হাজির করা হোতো খাওয়ার টেবিলে !!   গরম ধোঁওয়া ওঠা ভাতের ওপর এক বাটি লাল ,হলুদ ডিমের ঝোল , আধখানা ডিম আর দু খানা আলু পড়ত ধপাস করে !!  গরম মশলার সুগন্ধ নাকে যেতেই আধবোজা চোখে মেপে নিতাম থালা !  ! কিন্তু একি ! আধখানা ডিম !!  ঘুম চটকে আলুসেদ্ধ !! গাল ফুলিয়ে বসে রইলাম তিনজনেই ! আধখানা ডিম খাবো না ! মা ঠাকুমার মতে বাচ্চাদের হাঁসের ডিম গোটা খেতে নেই ! পেট গরম হয় !! পেট গরম বস্তুটা ঠিক কাকে বলে সেটা বুঝতে বেশ সময় লেগেছিল !!  ডিমের ঝোলটা আড়চোখে বায়না করতে করতেই দেখতে থাকলাম !  কি একটা যেন অন্যরকম !! আধখানাই যদি হয় তবে কুসুম গেল কোথায় ??  সন্দেহ নিরসন করতে ভাতে হাত দিলাম !!  উঁহু ডিম তো এখন খাওয়া যাবে না !! সবেধন নীলমণি ! তোমাকে আমরা সবার শেষে সাবাড় করব !! ডিমটায় কিছু একটা করা হয়েছে !! আধখানা অথচ কুসুমও দেখা যাচ্ছে না ! ঝোল ভাত মেখে আলু দিয়ে নিঃশেষ করে দ্রুতগতিতে ডিমের দিকে এগিয়ে চলেছি তিনজনে !!  যে যতক্ষণ ডিমটা সংরক্ষণ করতে পারবে সেই হাসবে বিজয়ের হাসি !! এ ব্যাপারে আমার ছোট ভাইএর জুড়ি মেলা ভার !! একবার তো চুপচাপ লেপের তলায় নিয়ে গিয়ে দেখিয়ে দেখিয়ে কুসুম খেয়েছিল !! যাই হোক ভাত শেষ করে ডিমে কামড় বসালাম ! আহা ! আহা ! যেন মেঘের মধ্যে দিয়ে ভেসে চলেছি ! মুখ জুড়ে অনন্ত সুখ , বন্ধ চোখের নিভৃতে পা দোলাতে দোলাতে কুসুমের স্বাদে মাতোয়ারা আমি !! কিন্তু বিষয়টা কি সেইদিন বুঝিনি ! কেন কুসুম দেখা যাচ্ছিল না সেটাও বুঝিনি ! শুধু জানতাম সে আছে ! গভীর গোপন রহস্যের ন্যায় পর্দার আড়ালে নববধূর মত আত্মগোপন করে আছে !  তারপর ঠাকুমাও চলে গেলেন একদিন ! দাদা আর তার বন্ধু মিলে  বারোটা ডিমের অমলেটও খেলো ! কেউ নিষেধ করার নেই !! এখন আর কেউ বাচ্চাও নয় যে পেট গরম হবে !! কিন্তু আমার মস্তিষ্কের ছোট্ট একটি প্রকোষ্ঠে শুধুই বারে বারে অবগুন্ঠিত কুসুমের রহস্য আলোড়ন তুলে চলে !!  আজ অনেকদিন পর বড় সাধ জাগল !  আজ বহুদিন পর সেই ধোঁয়া ওঠা পাতলা ঝোল , সেই অর্ধেক হাঁসের ডিম , সেই গরম মশলার গন্ধ !!   DSCN6244

মরশুমী

এ শহরে শীত বড় শৌখিন ! গায়ে হালকা কার্ডিগান নিদেনপক্ষে গলায় বাহারী স্কার্ফ ! শীতকাতুরে বলে আমার ছোট থেকেই বদনাম !! এই শহরে প্রথম প্রথম বেশ ঘোল খেতাম ! নর্থবেঙ্গলের স্মৃতি মাথায় রেখে একখানা ফুল সোয়েটার চাপিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে প্রাণ ওষ্ঠাগত ! চারিদিক তাকাই আর ফন্দিফিকির খুঁজি কি ভাবে গন্ধমাদনটাকে গা থেকে নামানো যায় !  অথচ এই আমি কম্বল মুড়ে ঘরময় ঘুরে বেড়াতাম বলে কি প্রচন্ড হাসাহাসি হোতো ! আর স্নান ??? ওরে বাবারে সে রহস্য আরেকদিন উদ্‌ঘাটন হবে খন  !!! তখনও গ্যাসের ব্যবহার সেরকম চালু হয়নি ! সকাল হতেই উনুনে আঁচ পড়ে যেত !  উঠোনে ধোপার কড়াই এর সাইজ এক খানা লোহার কড়াই এ কাপড় সেদ্ধ চলছে ! একখানা লাঠি দিয়ে মা কাপড়গুলোকে মাঝে মাঝে উল্টেপাল্টে দিচ্ছে ! এ লাঠি যে সে লাঠি নয় ! এ লাঠির বহুল ব্যবহার ! আদরী ( গরু) ঠেলা মেরে যাতে বালতির জল ফেলে শুধু খোলটুকু না খায় তার জন্যে লাঠি ! কাপড় সিদ্ধ করার জন্যে লাঠি ! সর্বোপরি আমাদের তিন ভাইবোনের বেচালকে চাল এ আনার জন্যে ! উঠোন জুড়ে সোডার গন্ধে ‘ম’ ‘ম’ করছে ঘরবাড়ি !  মায়ের মেজাজ বেশ তিরিক্ষি বোঝাই যাচ্ছে ! গন্ধমাদন কম্বল জড়িয়ে ব্রাশ হাতে নিতেই জোর ধমক খেলাম … ‘কম্বলটা মাটিতে লাগতেসে !! তোর কি কোনো গরমজামা জোটেনা !’  মায়ের চোখের দিকে ফিরেও তাকাচ্ছি না আমি ! না তাকিয়েও টের পাচ্ছি গনগনে আগুন বেরোচ্ছে দু চোখ দিয়ে ! আবার ধমক … ‘ কি হোলো কথা কানে যায়না !!’ মিনমিন করে বলি ‘ যাচ্ছি তো ! ব্রাশটা করতে দাও না’ !  ‘টেবিলে চা ঢাকা আছে!’ লাঠি উঁচিয়ে মা চলে যায় ! কিন্তু ঠাকুমা গেল কোথায় ! রান্নাঘরে উঁকি দিতেই দেখি এক গলা সাদা কাপড়ে ঘোমটা দিয়ে তিনি  ছোলার শাক বাছছেন ! অনেকবার জিজ্ঞেস করেছি ‘ও ঠাকুমা তুমি ঘোমটা দাও কেন ? কিসে এত লজ্জা তোমার !’ ঠাকুমা ফোকলা দাতে হাসে কেবল ! ‘আলো মাইয়া !! তোর বাপ আসেনা !’ আমি অবাক … ‘ বাবা ! বাবা তো তোমার ছেলে ! ছেলেকে কেউ লজ্জা পায় !!’ ‘পুরুষমাইনসের সামনে ঘোমটা দেওনেরই নিয়ম ! তোর এত কথায় কাম কি রে ছেমড়ি ! লেখাপড়া নাই ?’  তখন বুঝতাম না ! এখন বুঝি ঠাকুমার কাছে কোন যুক্তি ছিল না তাই আমার দুর্বল জায়গায় আঘাত হেনে আমাকে নিরস্ত্র করত ! কি অদ্ভুত মা ছেলের রসায়ন ! ঠাকুমা এক গলা ঘোমটা দিয়ে বাবার সাথে কথা বলত ! বাবাও সেইমতই অভ্যস্ত ! ভাবলে অবাক লাগে এই প্রথা নিয়ে কারো কোন প্রশ্ন উঠত না মনে ! স্নেহের ব্যাপারে ঠাকুমার একচোখোমিটা বড়ই প্রকট ছিল ! তা নিয়ে দুঃখ যত না হোতো তার চেয়ে রাগ বেশী হোতো ! দুধের সর , দই এর চাকা , মুচমুচে বড়া এ সবই জুটত দাদার কপালে ! আমার কপালে অবশিষ্টাংস ! মা এ ব্যাপারে বিস্তর প্রতিবাদ করেও কোনরকম ফল প্রাপ্তি হয়নি ! তবে আমিও ছাড়নেওয়ালী পাত্রী নই … লড়কে লেঙ্গে হিন্দুস্তান ! ঠাকুমার স্নান কিংবা পুজোর অপেক্ষায় থাকতাম ! ঝোপ বুঝে বুড়ির নিরামিষ খাবারের ঝুড়ি উঠিয়ে মাঝেই মাঝেই সজনে ফুলের বড়া , চালতার আচার এসবের ওপর কোপ বসাতাম ! ফলে ঠাকুমার গুড বুকে কোনদিনই আমার থাকা হয়নি ! ঠাকুমার কাছে আদরের নাতি ছিল আমার বড় দাদা ! তিনি ভাল মানুষ গোছের … আমার মত বাঁদর টাইপ নয় কাজেই ঠাকুমার যাবতীয় আহ্লাদ তার জন্যে রাখা !

কাল পৌষ সংক্রান্তি ! রাত জুড়ে শুরু হোলো মা , ঠাকুমার মহাযজ্ঞ ! সাথে ডলিদি (জ্যেঠতুতো দিদি ) হাত লাগিয়েছে ! সাদা সাদা কি সব যেন মাখা হয়েছে ! আমি একটা আসন পেতে গুটিশুটি মেরে বসলাম ! আমার কনিষ্ঠ ভ্রাতাটিও আমার সঙ্গ নিল ! অবাক চোখে দেখতে লাগলাম ঠাকুমা সাদা মন্ড দিয়ে কি সুন্দর সুন্দর হাতি ,ঘোড়া , মেয়ে পুতুল বানাচ্ছে ! জিজ্ঞেস করে জানলাম বস্তুটির নাম দুধ পুলি ! দুধে এসব পুতুল ফেলা হবে ! কিসের পুলি !! কেমন খেতে !! চুলোয় যাক সে সব ! আপাততঃ আমার ঐ মেয়ে পুতুলটি চাই ! ততক্ষণে চালের গুঁড়ি শেষ ! থালায় মেয়ে পুতুল বলতে ঐ এক খানি ! দাদা এসে উপস্থিত ! এইবার তিনজনে মিলে বিবাদ শুরু ! ঐ মেয়ে পুতুলটিই তিনজনের চাই ! আর আমি জানি ঠাকুমা কোন না কোন কায়দা করে ওটা দাদার হাতেই ধরাবে ! কাজেই আমি রান্নাঘর থেকে নড়ছি না ! পুতুলের অপেক্ষা করে করে কখন আসনে ঘুমিয়ে পড়েছি কখন বাবা পাঁজাকোলা করে ঘরে নিয়ে গেছে কিছু মনে নেই ! সকাল হতেই মনে পড়েছে মেয়ে পুতুলের কথা ! দৌড়ে রান্না ঘরে ঢুকে বড় হাঁড়ির ঢাকা খুলে মাথা ভোঁ ভোঁ করে ঘোরে ! অজস্র দুধ পুলি ! কোথায় খুঁজব আমি মেয়ে পুতুল !  ‘ওমা ! আমার মেয়ে পুতুল হারিয়ে গেছে’ ! মা এসে ঘেঁটে ঘেঁটে যখন উদ্ধার করল ততক্ষণে মেয়ে পুতুল হ্যান্ডিক্যাপড হয়ে গেছে ! এরকম মেয়ে তো চাইনি আমি ! মুখ গোঁজ করে বললাম ‘ লাগবে না আমার ! দাদাকে দিয়ে দাও’ !

****************

কাল রাত থেকে পিঠের তোড়জোড় করছি ! দাদার আর ওড়নার পছন্দের পাটিসাপটা !  প্রথম পিঠেটা প্রতিবারই দেখি ভাল ওঠেনা ! একটু এবড়োখেবড়ো , ভাঙ্গা ভাঙ্গা ! ঠাকুমা বেঁচে নেই ! থাকলে দেখতে পেতেন প্রতি শীতে ঐ ভাঙ্গা পিঠেটা একমাত্র আমিই খাই !

DSCN5844DSCN3296

স্বপ্ন-কল্প-দ্রুম

অদ্ভুত একটা জায়গায় বাড়িটা । রাস্তা থেকে সিঁড়ি উঠে গেছে প্রবেশমুখ অবধি ।হ্যাঁ প্রবেশমুখই বলব  কারণ ওটাকে দরজা বলা যায় না ।হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকতে হয় ওখানে । জয়িতা প্রতিবারই চেষ্টা করে কিন্তু পারেনা ।ফোকর গলে তার দৃষ্টি চলে যায় ভেতর অবধি ।ঘরের মধ্যে অনেক পরিচিত লোকজন ।মা , বাবা, ভাই,বোন আরো অনেকে ।সবাই ভীষণ গল্পে মত্ত ।কেউই জয়িতাকে দেখতে পাচ্ছে না এখন ।অসহায়ের মত সরীসৃপ হয়ে কাঁদতে থাকে জয়িতা ।

এই কি হল?কি হয়েছে ‘জয়ি’ তোমার? কাঁদছ কেন?

ধড়মড় করে উঠে বসে জয়িতা ।ঘেমে নেয়ে একসা ।উফ! কি ভয়ঙ্কর স্বপ্ন! আমি আমাদের বাড়ীতে ঢুকতে পারছিনা!

ধুর্‌ ও তো স্বপ্ন!কালই নিয়ে যাব তোমাকে বাড়ী ।দেখা যাক্‌ কেমন ঢুকতে পারছ না । আর্যের সান্ত্বনায় জয়িতা আশ্বস্ত হওয়ার চেষ্টা করে।

আর্য আর বিহু মুচকি হাসে ।আজকাল তাদের দৈনন্দিন জীবনে এ ঘটনা উপরি পাওনা ।একেক দিন যে কি লজ্জায় পড়তে হয় জয়িতা কে, সে আর বলার কথা নয় ।

এই তো গত রবিবার ।চায়ের টেবিলে হেসে গড়িয়ে পড়ছিল ওরা দুজন……সাথে কাজের মেয়েটাও ।স্বপ্নেরও বলিহারি! আগের দিন জয়িতা গিয়েছিল রথবাড়ী বাজারে ।পুজোর ফলটা ওখান থেকেই কেনে সে। হঠৎ পেছন থেকে, ‘দিদি সামলে সামলে!’ ঘাড় ঘোরাতেই বিশালাকৃতি এক ষাঁড়……গম্ভীরভাবে আওয়াজ ছাড়ল ‘হুমম্‌’। আর যায় কোথায়! ‘মাগো!’ বলে জয়িতা ফল ফেলে কুঁচি তুলে দৌড়। দোকানী হাঁক পাড়ে, ‘ও দিদি ও কিছু করে না’…কিন্তু কে শোনে কার কথা । একেবারে বাড়ী এসে হাঁফ ছেড়ে বাঁচল।ঐ একটা প্রাণীকে সে দুচোখে দেখতে পারে না ।ভুলেই গিয়েছিল সকালের ঘটনাটা … দুপুরে একটু নিশ্চিন্তে ঘুম    দিচ্ছিল  । পাশের বাড়ীর মেয়েটার ডাকে ঘুম ভাঙ্গল।‘আর্য্’র সাধের ‘বামচাম্‌’টা উড়ে গিয়ে পাশের বাড়ীর ছাদে ।উফ্‌ এই মণিটাকে কতবার বলেছি কাপড়ে ক্লিপ লাগাতে!দুদ্দাড় করে দৌড় লাগায় জয়িতা। ঐ ‘বামচাম্‌’ই হল কাল। শনিবার সারারাত ধরে একটা ষাঁড় ‘বামচাম্‌’ পড়ে গোটা বাজার ধাওয়া করে গেছে তাকে।

আর সে নির্বাক চলচ্চিত্র নয় একেবারে ‘রানিং কমেন্টারি’ সমেত!

কাজেই রবিবারের চায়ের আসর থেকে নিস্তার পাওয়া অসম্ভব ব্যাপার!

 ছোটোবেলায় নাকি ঘুমের ঘোরে এক ঘর থেকে আরেক ঘরে চলে যেত সে!বিয়ের আগে এরকম বাড়াবাড়ি হত! আজকাল জয়িতা বেশ ভয়ে ভয়ে থাকে ।স্বপ্নের কথা সব ফাঁস হয়ে পড়ে রোজ  আর এ নিয়ে হাসাহাসি কাঁহাতক  ভালো লাগে!তাই গরমের ছুতোয় পাশের ঘরে শোয় । আর্যের মুখ তাই হাঁড়ি,বিহুর চোখেও অভিমান । মায়ের পাশে শোওয়া দশ বছরের অভ্যাস তার।কদিন সহ্য করার পর আজ সে জেদ ধরে মায়ের কাছে শোবে । অগত্যা মেনে নিতেই হয়।

সারাটা দিন নির্বিঘ্নে কেটে যায় ।জয়িতা মনে মনে আশ্বস্ত হয়!যাক্‌ গতরাতে তাহলে সে ভুলভাল বকেনি । বিহু স্কুল থেকে ফিরে আসে । আর্য অফিস থেকে ।বিহু  আজ খুব লক্ষী মেয়ে  হোম টাস্ক করে নেয়  নিজে নিজে। খাওয়া নিয়েও মোটে ঝামেলা করেনা । মেয়ের আচরণে জয়িতা একটু অবাকই হয় । ‘হ্যাঁরে বিহু আজ তোর কি ব্যাপার বলত? স্কুলে  বকুনি জুটেছে মনে হচ্ছে’ ।‘কই নাতো!!’বিহু স্পষ্ট চোখে মায়ের দিকে তাকায় ।

আর্য রোজকার মত খাওয়ার টেবিলে বিহুর সাথে খুনসুটি করে……বিহু অন্যদিনের মত রেগেও যায়না । জয়িতার কাছে ব্যাপারটা একটু অদ্ভুতই ঠেকে……হল কি মেয়েটার!!

রাতে আজও বিহু মায়ের কাছে শোবে ।জয়িতার খাবার দাবার গুছিয়ে আস্তে একটু রাত্রিই হয়ে যায়।বিছানায় চোখ পড়তেই দেখে বিহু ‘ ফেয়ারী টেল’ এ মুখ গুঁজে । কি রে ঘুমোস নি এখনো? ‘না তুমি এলে তারপর ঘুমোবো’…… ‘উফ্‌ বিহু যত বড় হচ্ছ তত ন্যাকা হচ্ছ!’ জয়িতা মেয়ের পরদিন ভোরে ওঠা নিয়ে যথেষ্টই চিন্তিত তাই আলো নিভিয়ে চটপট বিছানায় আসে। রাতে মায়ের কোল ঘেঁষে শোওয়া বিহুর  বহুদিনের অভ্যাস । মাকে জড়িয়ে ধরে বলে ‘মা তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে নাতো? জয়িতা এ ধরনের প্রশ্নে হোঁচট খায় … এ আবার কি কথা বিহু!! তোর কি হয়েছে বলত? 

বিহু প্রশ্ন করে, ‘মা তূণীর কে’?

চমকে ওঠে জয়িতা, ‘এ নাম তুই কোথায় শুনলি!’

‘কাল রাতে তুমিই তো ঘুমের মধ্যে তূণীর তূণীর করে ডাকছিলে’।

‘আর কি বলেছি আমি!!’ জয়িতা ফ্যাসফ্যাসে গলায় প্রশ্ন করে ।

‘ওই জড়ানো গলায় কি যেন বলছিলে ……তূণীর চল …আমাকে নিয়ে চল…এরকমই কি যেন…’

জয়িতা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে ‘বিহু’র দিকে । 

এক ছটাক ভুল —– অধরামাধুরী

ভগবান অতি সন্তর্পণে তার বুটিকে এক্সক্লুসিভ এক পিস করেই সৃষ্টি করেছিলেন ! কিন্তু তাতেও কি রক্ষা আছে !! ভগবান আমার মত ‘ঘেঁটে ঘ’ করা কিছু মানুষও সৃষ্টি করেছেন ! উদোর মুখ বুধোর ঘাড়ে চাপাতে আমি ওস্তাদ ! প্লিজ হাসবেন না ! মাইরি বলছি ! চকোলেট হিরো ফারদীন খানের সাথে আমার ডান্স টীচার ঊর্মিমালাদির প্রবল সাযুজ্য ! কি !! চোখের মিল নেই ! থুতনিটা দেখুন ! অবিকল এক ! ডানকানের লতিটা দেখুন ! ঠিক ঐ রকম ! এসব সুক্ষ্ম ব্যাপার মশাই ! আপনি বুঝবেন না ! এ হোলো জহুরীর চোখ !

এ হেন জহুরীর চোখে আমি আজন্ম রাহুলের পিসিকে পারুলের মাসি বানাই , অমিতার জামাইবাবুকে সুমিতার নাতজামাই করে ফেলি ! এক বার নয় দু বার নয় , টাইটানিক দেখার মত বারবার ! বারবার আমি ঐ প্রকারের বেঠিক কাজ করে থাকি ! এই না! প্লিজ ! ভুল বলবেন না ! সন্মান দিয়ে কথা বলুন ! ভুলটা শুনতে কেমন যেন ইসে ইসে লাগে ! যতই হোক দুশো ছয়টা অস্থি আমার , অ্যাপেন্ডিক্সও লুপ্তপ্রায় , জন্মের সময় ল্যাজ খসে গেছে ! কাজেই ভুল বলবেন না দয়া করে ! মানুষমাত্রে হয় বটে তবে মানুষমাত্রে স্বীকৃতও নয় !

ইদানীং আরেক ধরনের বেঠিক কাজ পিছু নিয়েছে আমার ! আপাততঃ সমস্যাটা মাছির মত উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে বসছে নাকের ডগায় ! লোকটাকে কোথায় যেন দেখেছি ! মরুভূমির মধ্যে একটুকরো মরুদ্যানের মত জেগে উঠছি আমি ! আমার চারপাশ যেন স্নিগ্ধ খেজুর গাছ ! আমার অন্তঃস্থল এক টলটলে জলাশয় ! না না ! আমি ভাবছি না ! ঐ লোকটা ভাবছে ! আর ভেবে ভেবে দূর থেকে ভীড়ের মধ্যে হাত নাড়তে নাড়তে এগিয়ে আসছে !

এ কে রে বাবা  !!! পাড়ার মুদিখানা না কি  স্টেশন রোডের মুদিখানা ?  দোকানদারদের সাথে কুশল বিনিময়ের অদ্ভুত রসায়ন আমার ! অর্থাৎ মাছওয়ালাকে  ‘মা তারা বস্ত্রালয়’ এ দেখলে চিনতে পারিনা ! হাতে পেল্লায় গোব্দা কাতলা ধরিয়ে দিন সামনে রাক্ষুসে বঁটি ! ব্যাস ! এক সেকেন্ডে চিনে ফেলব ! কিংবা ধরুন মিষ্টির দোকানদার যদি সিগন্যালে আটকে থাকে তাহলে ব্যাপারটা দাঁড়ায় এরকম যে বাকী লোক অপেক্ষা করে সিগন্যাল সবুজ হলেই রাস্তা পার হবে আর আমি অপেক্ষা করি স্মৃতিশক্তি ফেরার ! সিগন্যাল সবুজ হয় ! লোকটা রাস্তা পেরিয়ে দূরে চলে যায় … আরও দূরে … বিন্দু হয়ে মিলিয়ে যায় ! আমি তখনো আটকে আছি লাল বাতিতে !  মনের ভেতর ফলুই মাছের কাঁটা বিঁধতে থাকে … কোথায় যেন দেখেছি লোকটাকে ! কোথায় যেন দেখেছি লোকটাকে !

‘আপনি এখানে দিদি ?’  রুবি হসপিটালের ফার্ষ্ট ফ্লোর ! ছেলেটা এগিয়ে এল ! যথারীতি আমার ভুলভুলাইয়া সিন্ড্রোম শুরু ! কিন্তু হলে হবে কি ! আমার দিদিমা বলতেন ‘ ভাংবে তবু মচকাবে না’ ! দু পেয়ের জাত আমি ডলফিন হলে আরো কি কি করত জানা নেই ! স্মৃতি যাক চুলোয় ! ফেসবুকে তো কত লোককে না চিনে এন্তার গেঁজিয়ে যাই ! কুশল জানতে আটকাচ্ছে কোথায় ! নিজের মুখের ভৌগলিক অবস্থান অক্ষুণ্ণ রেখে প্রাচীন ইতিহাস একটুও না ঘেঁটে বললাম এই  আমার পিসতুতো দিদি ভর্তি আছে !  তা তুমি এখানে ? দু এক কথায় বুঝলাম ছেলেটির মা ভর্তি ! হার্ট অ্যাটাক !  ছেলেটা অনেক কিছু বলে যাচ্ছে ! কিন্তু শ্রোতা কে? আমি তো পুরোনো ট্রাঙ্কের ভেতর থেকে কাঁথা , ন্যাতা , তুলো বের করা বালিশ হাতড়ে চলেছি ! এই মূহুর্তে আমি  শক্তিপদ স্যারের ক্লাসের সেই অমনোযোগী ছাত্র !  ‘ এই তুমি ! দাঁড়াও তো ! বলোতো হোয়াট ইজ লার্নিং ?’ ছেলেটা থতমত ! কিচ্ছু শোনেনি ! স্যার বললেন ‘ আমি তোমার চোখ দেখেই বুঝেছি ! অমন নির্লিপ্ত মরা মাছের চোখ আর যাই হোক জ্ঞান আহরণ করছে না এটা পরিষ্কার আমার কাছে’ !

আহারে বেচারী ছেলেটা ! ওর শক্তিপদ স্যারের মত চোখ নেই ! ও জানেও না আমি এখন ওকে চেনার চেষ্টায় বিভোর ! হেল্প ডেস্ক থেকে মহিলাকন্ঠ ভেসে আসে ! ‘দুশো বারো নম্বর এর বাড়ির লোক কে আছেন ?” ছেলেটি সচকিত ! যাই দিদি ! ওরা ডাকছে ! ঘাড় নাড়লাম ! ছেলেটি মিলিয়ে গেল ভারী দরজার ওপাশে ! আর ঠিক ততটাই ভারী দরজা চেপে বসল আমার মনের ওপর ! ইসস্‌ ! কোথায় যেন দেখেছি ছেলেটাকে ! কোথায় যেন দেখেছি ! লাট খাওয়া ঘুড়ির মত ওলট পালট হয়ে হেল্প ডেস্কে পৌঁছোলাম ! নার্স জানালো ডাক্তারবাবু রাউন্ডে আসতে আরো আধ ঘন্টা !  অতএব স্বল্প প্রস্থের ইস্পাতীয় কেদারায় হেলান দিয়ে বসলাম !   ক্ষুদ্র মোবাইল ভরসা ! ‘ব্রিক ব্রেকার’ গেমটি চমৎকার টাইম পাস !  পাসোয়ার্ড দিতেই চক্ষু চড়কগাছ ! চার্জ এসে তলানিতে ঠেকেছে ! অনেকটা আমার মতই দশা !  কাজেই গেম নৈব নৈব চ ! এদিক ওদিক তাকালাম ! বয়সের টুপিতে পালক বৃদ্ধির সাথে সাথে হসপিটালে আসার অভিজ্ঞতাও চক্রবৃদ্ধিহারে বেড়েছে ! অদ্ভুত এক ছোঁয়াচে রোগের মত এই হসপিটালগুলো ! রোগী হয়ে ঢুকলে চরম অসুস্থ লাগে আর রোগীর আত্মীয় পরিজন হয়ে ঢুকলে স্বল্প অসুস্থ লাগে ! মোদ্দা কথা অসুস্থতাটা ‘আপনি থাকছেন স্যার’ এর মত ! স্যাভলন , স্পিরিট , হুইল চেয়ার , লিফটে শায়িত অচৈতন্য রোগী , চারপাশে রেড ক্রশ সব মিলে যেন একটা ভয়ঙ্কর ক্যানসারের মত অপ্রতিরোধ্য হয়ে চেপে বসে ! দূর ছাতা ! শেষমেষ ঐ ভারী ভারী মেডিক্যাল জার্নালগুলোই ওল্টাতে হবে ! টেবিলের তলা থেকে ধুলো ঝেড়ে বইটা টানতেই মনে পড়ল ! ‘ইউরেকা ! চিনেছি ! চিনেছি ! নাহ চেঁচাচ্ছি না ! এখনও অতটা ভীমরতি হয়নি ! এটা হসপিটাল !  ঐ যে দরজায় লেখা ‘কিপ সাইলেন্স ‘ !  সে যাই হোক ! চিনেছি তো ! ‘জগদ্ধাত্রী বুক হাউস’ ! ঐ বইএর দোকানেই তো বসে ছেলেটি ! ও না বললে তো জানতামই না জয় গোস্বামী এত ভাল গল্প লেখেন ! জোর করে ধরিয়ে দিয়েছিল  ‘দাদাভাইদের পাড়া’ ! ‘দিদি নিয়ে যান ! পড়ে বলবেন’ !

‘আহারে ! বেচারীর ফ্যামিলিতে সঙ্গী বলতে ঐ বৃদ্ধা মা !’ এতক্ষনে আমার প্রকৃত হর্মোন ক্ষরণ শুরু হোলো ! উফফ্‌ এতক্ষণে ভারী পাল্লাটা সরলো ! প্রাণ ভরে অক্সিজেন নিলাম !

বন্ধুবান্ধবদের আজকাল ভয়ে জানাই না এসব ! বয়সের দোষ বলে এমন খ্যাক খ্যাক করে হাসে দেখে পিত্তি জ্বলে যায় ! একজন তবু অন্ধের মধ্যে ঝাপসা ! বিজ্ঞের মত কাউন্টার পার্টে টান দিয়ে বলল ‘থাইরয়েড ! থাইরয়েড ! আমার মায়ের সেম কেস ! খালি ভুলে যেত ! শুরুতেই হান্ড্রেড ডোজ চার্জ করল ডাক্তার’ ! হিসেব কষলাম ! মাংস , মিষ্টি ,আলু , মুসুরডাল !  নাহ ! কোনটাই বাদ পড়ছে না ! অতএব ‘ জয় মা’ নাম নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে রক্ত পরীক্ষা ! হ্যাঁ ! ঠিক ! বন্ধু তো নয় যেন চলমান বেদ ! নাকের ডগায় চশমা এঁটে খসখস করে দু কলমে আমার সারা জীবনের হিসেব কষে দিলেন ডাক্তারবাবু ! ওষুধ খাওয়ার একটাই শর্ত ! ভোলা চলবে না ! মনে করে একটা ডোজ খালি পেটে সকালে ! যাহ্‌ কেলো ! এটা কি হোলো ! একটু আধটু ভুলের মাশুল আমৃত্যু গুনতে হবে ! এই যাহ্‌ গুলিয়ে গেল ! মানুষ ভুলে গিয়ে ভুল করে না কি ভুল করে ভুলে যায় ! কি জ্বালাতন ! সে যাকগে ! আটা , বেলন চাকী , উনান দিয়ে দিলাম ! একটু নিজের মত করে এপিঠ ওপিঠ সেঁকে নেবেন !

ছোট্ট মোদের পানসী তরী …সঙ্গে কে কে যাবি আয় ! —- ২৮ শে মার্চ ২০১৩

collageগ্রামের নাম দারোন্দা । বোলপুর স্টেশন থেকে চারচাকায় ২০-২৫ মিনিটের পথ । ঐ যে সুমনের একটা গান আছে না …ইচ্ছে হল এক ধরণের গঙ্গাফড়িং … সেই গঙ্গাফড়িং মাঝে মাঝে ভর করে আমার এবং আমার এক দিদির মাথায় … ব্যসস ভাবামাত্র সমস্ত অশান্তি জলাঞ্জলি দিয়ে বোলপুর শান্তিতে চেপে বসি দুজনে … ট্রেন থেকে গাড়িওয়ালা,মাছওয়ালাকে ফোন … দুদিন টাটকা মাছ,বুক ভরে বাতাস আর পায়ের তলায় লাল সুরকি …আর কি চাই জীবনে!! এত গেল সারা বছরের গল্প … দুজনের গল্প আর কতদূর যাবে !

দিদি বলল অনেক হয়েছে এবার অনেককে নিয়ে একটা প্ল্যান করত । করে ফেললাম প্ল্যান … ফোনে ফোনে এই বার্তা রটি গেল ক্রমে … জনা ষোলো লোক যাবে দারোন্দা-গ্রামে … এবার চলল দড়ি টানাটানি … এই আমার ইয়ার এন্ডিং … এই আমার ব্যস্ততা তোর চেয়ে কিছু কম না …চাকরি করি চাকরি …তোর মত  স্বাধীন ব্যবসা নয় … এই পুনম আগামী দুদিন এর যা যা লাইনার , স্ক্রিপ্ট সব লিখে দিয়ে যাচ্ছি …একদম বিরক্ত করবে না আমাকে … হ্যাঁ হ্যাঁ দারোন্দা … এবার সপরিবারে যাচ্ছি …কেন হোটেলে কেন … আমাদের তো বাড়িই রয়েছে ওখানে… এই অঞ্জন তোর কিন্তু কোন কথা শুনব না…তোর টিকিট কাটছি এবং তুই আমাদের সাথে যাচ্ছিস … হিয়াদি এত আগে থেকে আমি সত্যিই কিছু বলতে পারব না …প্লিজ্‌ একটু সময় দাও … পরী টিকিট কাট …যে যায় যাবে না যায় না যাবে … অবশেষে টিকিট কাটা হল … সাকুল্যে দাঁড়ালো নয়জন বাকী তিনজন পরেরদিন ছেঁচড়ে আসার চেষ্টা করতে লাগল ।

২৮শে মার্চ …হিয়াদির ফোন এল তখন বাজে ৯টা । এই আমরা বড়ঘড়ির তলায় দাঁড়াচ্ছি তোরা সোজা ওখানে চলে আয় ।  সোম এবং মনন আপাতত বিনা টিকিটের যাত্রী … যাদের যাওয়ার কথা ছিল তারা যাচ্ছে না তাদের বদলে দলে ভিড়েছে এই দুজন । অগত্যা তাদের টিকিট বৈধ করার উদ্দেশ্যে দুজন ছুটল কাউন্টারে … সোম এবং মননের অবশ্য কোন হেলদোল নেই তারা নিত্যানন্দ হয়ে চিপস্‌ কিনছে , কোল্ড ড্রিঙ্কস কিনছে … সোমের মুখ দেখে তখন বোঝার উপায় নেই তার পেটের ভেতর কি চলছে ।
সিন শুরু হল ট্রেন থেকে … তখনও স্টেশনের মায়া ত্যাগ করেনি ট্রেন … হুল্লোড় চলছে আমাদের …

হঠাৎ সোম বলল যাই ওদিকটা একবার ঘুরে আসি …

এই কোনদিকে যাবি ?

এই তো ওদিকে …

এই খবরদার !! ট্রেন স্টেশনে থাকা অবস্থায় যেতে নেই …

এখানে হওয়ার থেকে তো বেটার ।

যুক্তি আছে …কিচ্ছু করার নেই … মোবাইল , ঘড়ি সব জমা দিয়ে গেল… বুঝলাম বেশ অনেকক্ষণের ব্যাপার । ট্রেন চলল … ফিরে এল সোম … মুখ দেখে কিচ্ছু বোঝার উপায় নেই  … এদিকে চলছে ঝুরিভাজা ,লেবু চা আর উপরি পাওনা বাউল গান… গুসকরা থেকে শুরু হয়ে গেল “তোমায় হৃদ্‌মাঝারে রাখব …ছেড়ে দেবনা” … সোম আবার উঠে দাঁড়ালো … যাই একটু ঘুরে আসি…

উফফ্‌ আবার !! …..

.এই মাইরি !! এটা নিয়ে বাধা দিও নাতো ! ………

কিরে ! তোর কোন গড়বড় হয়নি তো …

এখনো ঠিক কেসটা বুঝে উঠতে পারছিনা

আজ তুই ঝোলাবি বুঝতে পারছি ।

এই পরী  আনন্দকে ফোন করেছিস ?

এই তো ! এইমাত্র কথা হল … স্টেশনে দুটো গাড়ী নিয়ে থাকবে বলেছে

আর মোহন ? মোহনকে বলা হয়েছে ?

প্রসঙ্গত বলে রাখি মোহন বাড়ির কেয়ারটেকার … জাতে সাঁওতাল …গুছিয়ে হাঁড়িয়া খায় … বিশাল বড় বাগানের এক কোণে বেগুন , টমেটো ফলায় … যার সিকিভাগও আমাদের কপালে জোটেনা … প্রায় সবটাই খেয়ে এবং নষ্ট করে যায় হনুমান । মোহন এর সাধের মোহনবাগান হনুদের জ্বালায় অতিষ্ঠ !

অবশেষে বোলপুর স্টেশন … বাক্স প্যাঁটরা নিয়ে সবাই আনন্দের গাড়িতে … জনা চারেক ছেলে থেকে গেল … তারা একটু বাজার হাট করে ফিরবে … উদ্দেশ্য পরিস্কার …নাহলে ভর দুপুরে বউ এর গুঁতানি ছাড়া কোন পুরুষ বাজারে ঘোরে বলুন তো! যাকগে যে যা খুশি করুক আপাততঃ পৌঁছতে হবে … ওদিকে বড়িশালের রান্নাঘরে পোস্তর বড়া গোল গোল চোখ পাকিয়ে আছে … দেরী আর সহ্য হচ্ছেনা … চলল গাড়ী … দুধারে লালমাটির রাস্তা … আকাশমণির সারি  … গাড়ির হর্ণের আওয়াজে হুড়হুড় করে নেমে যাচ্ছে এক পাল মহিষ …  গাছকোমর দিয়ে শাড়ি পরা সাঁওতাল যুবতী লালমাটির রাস্তা ধরে হেঁটে যাচ্ছে … পায়ের তালে তালে দুলে উঠছে খোঁপার বুগেনভেলিয়া ।

অবশেষে মিনিট কুড়ির পথ পেরিয়ে চলে এল দারোন্দা । দূর থেকে মোহন আর শেফালীর গলা পাওয়া গেল … একলা বাগানের মধ্যে উঁকি মারছে  ইঁট রং এর  দুটি  নিঃসঙ্গ বাড়ি । যেন আমাদের অপেক্ষাতেই তারা ছিল … দুলে দুলে  অভিবাদন  জানাতে লাগল গন্ধলেবু আর আম্রপালির পাতা … শেফালী নানারকম ফুল কুড়িয়ে যথাসাধ্য সাজিয়ে রেখেছে ঘর … মোহন পাম্প চালিয়ে জল ভরে রেখেছে … জল বিষয়টি বড় দূর্মুল্য এখানে … কুয়োর জলের লেভেল নেমে গেলে সাড়ে সর্বনাশ … যাই হোক আজ আর স্নানের ব্যাপার নেই … সবাই স্নান সেরেই রওয়ানা দিয়েছে … এখন শুধু পেটে দুটি দেওয়ার অপেক্ষা … কিন্তু বিধি বাম!! কোথায় সেই চার মহারথী !! লাগাও ফোন!! কি রে আর কত বাজার করবি!!

আরে সব দোকান বন্ধ তো ! আজকে ড্রাই ডে !

ও হরি !! এই ব্যাপার ! তা ড্রাই ডে বলে কি চাট্টি ভাতও জুটবে না কপালে!

অবশেষে ঘন্টাখানেক পর লালমাটির ধূলো উড়িয়ে এলেন চার মহারথী !!

চল চল চল !! খিদেয় সজারু ডন মারছে পেটের ভেতর …

আইতে শাল যাইতে শাল তার নাম বড়িশাল … ঢুকলাম বড়িশালের রান্নাঘরে … কোলকাতা থেকে ফোনে অর্ডার দেওয়া । প্লেট হাজির … ভাত, ঘি, ঝিরিঝিরি আলুভাজা ,শুক্তো ,পোস্তর বড়া , এঁচড় এবং ধনেপাতা দিয়ে রুই মাছের ঝোল । সাপটে খেল সোম তবু নজর ছিল তার পাশের টেবিলে ইলিশ মাছের দিকে

সোম বেশী লোভ করিস না …এবার মরবি কিন্তু

দেখো পরীদি  ইলিশ টা কিন্তু অর্ডার দিতেই পারতে

হুম পারতাম তবে তোর অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে না দিয়ে ভালই করেছি ।

এই মাইরি দুবার গেছি

আরও কতবার যাবি এখন তাই দেখ।

এরপর যে যেখানে পারল ছড়িয়ে দিল ভাত ঘুম … মননের চোখে ঘুম নেই … সে এবার প্রথম দারোন্দায়… প্রকৃতির হাতছানিতে সাড়া দিয়ে বিকেল হতে হতেই বেরিয়ে পড়ল ভ্যান রিক্সো নিয়ে হাতে হ্যান্ডি ক্যাম ।

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হল ! চা পর্ব সারা হল …মননের পাত্তা নেই । আরে গেল কোথায়! হঠাৎ ফোন এল মননের

শেফালীকে বল পেঁয়াজ কাটতে … গ্রামে একজনের বাড়িতে দেশী মুর্গী পেয়েছি … নিয়ে আসছি ।

কেলো করেছে !!মালটা কাটিয়ে আনবে তো !!

উফফ্‌ ! যা ভেবেছি তাই! মুখবন্ধ থলের ভেতর কঁকর কোঁ সহযোগে হাজির হল মনন

এই তুই দূর হ … দূর হ এখান থেকে!

যা বাব্বা! কি করলাম আমি!

কি করলি মানে ! কে কাটবে এগুলো! আর মিছরি জানতে পারলে কিন্তু চাপ আছে !

প্রসঙ্গত বলে রাখি মিছরি আমাদের দলের সর্বকনিষ্ঠ সদস্যা ।

কোথায় সাল্টাই বলতো মালটাকে

কেন ! কুয়োপাড়ে যা না! মোহনকে বল!

অগত্যা মনন  মোহনের দ্বারস্থ!

রাত আটটা । বাইরে চাঁদের হাসির বাঁধ ভেঙ্গেছে … ভেতরে ভেসে আসছে দেশী মুরগীর সুবাস … হিয়াদি তেড়ে রবীন্দ্রসঙ্গীত জুড়েছে …সোম ফাঁকফোকর দিয়ে আরো বার তিনেক বাম হাতের কাজ সেরে এসেছে … মিছরি  আই প্যাড এ মুখ গুঁজে গল্প পড়ছে … অঞ্জন সবার চোখ এড়িয়ে যতটা পারছে ফোনে ব্যবসা সেরে নিচ্ছে …রাজু আর পার্থিব পেগ মেজারটা মন দিয়ে করছে … আরেকটা ওভেনে চলছে কাতলা মাছ ভাজা … ফোন পেয়ে ভাগ্য (মাছওয়ালা) তিন কেজি কাতলা মাছ ফ্রিজ এ রেখে গেছে ।  অবলীলায় দেড় কেজি মাছভাজা সহযোগে ভদকা নিমেষে হাওয়া হয়ে গেল । শেফালী , মোহন বিদায় নিল । তাদের এখন যেতে হবে অনেকটা দূর ।

এবার শুরু হোল সোমের মিশর এপিসোড !! কাকাবাবু সিরিজের মিশর রহস্য এর শুটিং সেরে এসেছে মাসখানেক আগে … পৃথিবীতে কতরকম মাংস এবং সেটা কতরকমভাবে খাওয়া যায় তার পূর্ণ অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে এসেছে সোম … হাঁ করে গিললাম সোমের কথা !! কথা বললে ভুল হবে ! সোমের কথা তো  নয় যেন আস্ত ছবি … জাষ্ট তিন ঘন্টা কথা বলে একটা মানুষ কিভাবে একটা মুভি দেখায় সেটা না দেখলে না শুনলে বিশ্বাসই হবে না। এই সব কথার মাঝখানেও সোম এক দুবার ঘুরে এসেছে  …কোথা থেকে তা আর জিজ্ঞেস করে লজ্জা দেবেন না … মুখে কোন ছাপ নেই … মাথায় তার একটাই চিন্তা  দেশী মুর্গীটা ভালো করে সাঁটাতে হবে।

অবশেষে গুল গল্প হওয়ার পর খাওয়ার পালা ! বেড়ে রেঁধেছে  মনন !! সাপ্টে সবাই খাওয়া সেরে নিল মোমের আলোয় ! লোডশেডিং!! আলো কখন আসবে জানা নেই !!

গল্প করতে করতে কে কখন ঘুমিয়ে পড়ল তার হিসেব নেই ।

পার্থিবদা  কেবল জানান দিয়ে শুল …কাল ভোর পাঁচটায় উঠে সাঁওতালদের গ্রাম দেখতে যাব

আমিও যাব… আমাকে  ডেকো কিন্তু!

পরদিন বাগানের থেকে বিভিন্ন নাম না জানা পাখির আওয়াজ … ঘুম ভেঙ্গে দেখি হাল্কা রোদের নরম আলো উঁকি মারছে সবুজ বাগানে … একটা পিঁউ কাঁহা পাগলের মত দেকে যাচ্ছে ।

পার্থিবদা ,রাজু ,সোম উঠে পড়েছে সাথে আমিও

এই সোম তুই যেতে পারবি? অনেকটা হাঁটতে হবে কিন্তু

সেটাই তো ভাবছি … রাস্তায় পেয়ে গেলে !!

তুই আজকে অবশ্যই অ্যান্টিবায়োটিক খাবি নাহলে কিন্তু কমবে না … দুপুরে হাঁসের ডিমের দিকে ফিরেও তাকাবি না  বলে দিলাম!

নাগো ! তোমরা যাও ! আমার ভরসা হচ্ছে না!

অগত্যা আমি পার্থিবদা আর রাজু …

লাল সুরকির রাস্তা ধরে সোনাঝুরি গাছের সারি … হঠাৎ দুটো দেশী কুকুর এসে জুটল …অদ্ভুতভাবে আমাদের পথ প্রদর্শক হয়ে চলল তাঁদের একজন …একে তাকে জিজ্ঞেস করে পৌঁছে গেলাম সাঁওতালদের গ্রামে … ওদের চাহনি দেখে মনে হল না ওরা বিন্দুমাত্র অবাক হয়েছে … বুঝলাম ওরা এ ধরনের শহুরে কৌতূহলে অভ্যস্ত

অবাক করল একটা গাছ ! গাছ ভরে ঘিয়ে রঙের ফুল …মাতাল করা পায়েসের মত গন্ধ … কি গাছ ওটা !! হাতে তুলে গন্ধ নিলাম! বহু পরিচিত গন্ধ !! রাজু এক নিমেষে বলে দিলো ! ইয়েস!! এটাই তো ! এটাই তো সেই মহুয়ার গাছ!! এত নাম শুনেছি !! কিন্তু এভাবে দেখিনি কখনও ! আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলাম … হাঁস ,মুরগী ,শূয়োরের খামার পেরিয়ে …সাঁওতাল রমণীর সলজ্জ  চাহনি ছাড়িয়ে গ্রাম দেখতে দেখতে চলে এলাম … কুকুরটি  তখনও পিছু ছাড়ে নি… রোদ বেশ খনিকটা উঠে গেছে ওপরে … প্রায় আধঘন্টার রাস্তা হেঁটে এসে আমাদের অবাক করে দিয়ে কুকুরটা আমাদের আগে বাড়িতে প্রবেশ করল …তার মানে ও কাল বিকেলেই আমাদের খেয়াল করে বাড়ি চিনে রেখেছিল … ব্রিটানিয়া বিস্কুট দিয়ে জলযোগ সেরে তিনি প্রস্থান করলেন।

চা পর্ব শেষ করে সবে বারান্দায় বসেছি … এইসময় হিয়াদি বলে উঠল এই পরী কত নিমগাছ দেখেছিস! নিম্ বেগুন  খেলে কেমন হয় …যেই ভাবা সেই কাজ … বাগানের  কচি কচি বেগুন  আর নিমপাতা  বীর দর্পে  ভাঙ্গতে লাগলাম আমি হিয়াদি আর ঝুম্পা !

জলখাবারে বিজয়ের দোকানের লুচি, ছোলার ডাল আর রসোগোল্লা ।

মনন রান্না করার জন্যে খেপে উঠেছে! কেউ ঠেকাতে পারছে না … অবশেষে ডাল ,পটলভাজা, নিম বেগুন আর হাঁসের ডিম এর কষা …  ভাগ্য এর মধ্যে খাণিকটা বাটা মাছ, চিংড়ি মাছ আর পুঁটি মাছ দিয়ে গেছে … মাছের পরিমাণ দেখে শেফালীর মাথায় হাত … সোমের তখন শুরু হয়েছে শুধু যাওয়া আসা শুধু স্রোতে ভাসা … আমি হাঁসের ডিম খাইনা অগত্যা আমার আর সোমের বাটা মাছের পাতলা ঝোল।

দুপুরে বাটা মাছের ঝোল দিয়ে ভাতএর  গরাস তুলতে তুলতে সোম জানিয়ে দিল তার ভাগের  হাঁসের ডিম যেন তুলে রাখা হয়… সে আজ ওষুধ খাবে কাল ডিম খাবে ।

দুপুর নাগাদ এসে পৌঁছোলো বাকী দুই সদস্য … বাড়ির প্রকৃত মালিক … তাঁদের যাতায়াত খুব অদ্ভুত !! যাদবপুর থেকে সোনারপুর যেন তারা ডেলি প্যাসেঞ্জারী করছে্ন এমনভাবে দারোন্দা আসেন … যাই হোক শারীরীক বাধা বিপত্তি কাটিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক চার্জ করে সোম মেতে উঠেছে আবার তার গল্পে … ঘরে পিন ড্রপ সাইলেন্স … কাট টু …কাট টু করে একের পর এক মজার দৃশ্য বর্ণনা করে যাচ্ছে সোম !

বিকেলে চলে গেলাম রাস্তার মোড়ে বিজয়ের দোকানে চা খেতে … সোম বলে দিল  বনলক্ষী থেকে ঢেঁকি ছাঁটা চাল , বেগুনের আচার এসব নিতে হবে … কনফেট্টি থেকে সেরামিকের জিনিস চাই বলে দিল হিয়াদি… কিন্তু এসব হবে কখন … বাড়ির খাওয়া আর আড্ডা ছেড়ে কেউ তো বেরোতেই পারছে না ।

সন্ধ্যাবেলায় গানে ,গল্পে্‌ , ভদকায়্‌ ,পুঁটিমাছ আর কাতলা মাছ ভাজায় মেতে উঠল আসর । রাতে আর কার খাওয়ার ইচ্ছে নেই … ডাল আর আলুর চোখা দিয়ে ডিনার সেরে সব বারান্দায় গল্পের আসরে … যার যত মজার গল্পের স্টক তার তত পায়া ভারী……সোম ওষুধ খেয়ে সামলেছে ক্ষাণিকটা ।

কাল সকালে যাব লক্ষীসায়র … বিরাট এক দীঘি … সেখানে অনেক শ্যুটিং হয়!

পিঁঊ কঁহা টা এখনও ডেকে চলেছে … বেচারার সাথীটা হারিয়ে গেছে বোধ হয়।

ঘুম ভাঙ্গল সেই পাখির কিচিরমিচির এ … ঝটপট হাত মুখ ধুয়ে বেরিয়ে পড়লাম লক্ষীসায়রের উদ্দেশ্যে । আজ দল ভারী …পার্থিবদা ,মনন, রাজু,সোম ,মিছরি  ,আমি

রাস্তায় যেতে যেতে চোখে পড়ল অসঙ্খ্য বেয়াদব হনুমান … তারপর লক্ষীসায়রে হাঁসেদের জলকেলি … সোমের সরস মন্তব্য…বেশ খাণিকক্ষণ কাটিয়ে ফিরে এলাম ঘরে … ভাগ্য্ লোভ দেখিয়ে আবার মাছ পাঠিয়ে দিয়েছে … নেবনা নেবনা করেও দেশী মাগুরগুলো দেখে কেউই আর কন্ট্রোল করতে পারলাম না… এবার মনন আর সিনে নেই … মাছ রাঁধতে হবে যখন তখন পরীই মানে আমি যাব রান্নাঘরে …।

আদা গোলমরিচ বাটা দিয়ে মাগুর মাছের ঝোল আর কুচো চিংড়ি বাটা এই দিয়ে সেরে ফেললাম মোটামুটি … রান্না করে এ যাবতকাল যত কমপ্লিমেন্ট পেয়েছি তার মধ্যে সোমের কমপ্লিমেন্ট সবচেয়ে সেরা …কিন্তু দু;খের বিষয় এই কমপ্লিমেন্ট এর ভাষাটা  সর্বসমক্ষে কোনদিনই বলা হয়ে উঠবে না…

৬ টা ৩০ এ ট্রেন ধরতে হবে …যাই একটু গড়িয়ে নি গিয়ে ।

বিকেলের আলো নিবু নিবু …… ঘরের দরজায় দুটো গাড়ি দাঁড়িয়ে …… বাক্স প্যাঁটরা নিয়ে উঠে পড়লাম … ছেড়ে দিল চারচাকা … দুটো নিঃসঙ্গ বাড়ীকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা শহুরে সভ্যতার দিকে ।